জ্ঞান দিতে নয়, জীবনের প্রয়োজনে জীবন নিয়ে কিছু ভাবনা !! - মাহবুবা সুলতানা শিউলি
জ্ঞান দিতে নয়, জীবনের প্রয়োজনে জীবন নিয়ে কিছু ভাবনা !!
লেখক: মাহবুবা সুলতানা শিউলি
মেম্বার, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
মেম্বার, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
কেউ আপনাকে সুযোগ দিবেনা বা সুযোগ করে দিবেনা। নিজের যোগ্যতা দিয়েই নিজেকেই নিজের জায়গা করে নিতে হবে। কাজেই যোগ্যতা অর্জন করেই নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে।
পৃথিবীতে এমন মানুষ খুব কমই আছে যে অন্যের সাফল্যে বা যোগ্য ব্যক্তির ওপর ঈর্ষান্বিত হয়না। কেননা সৃষ্টি জগতের ১৮ হাজার প্রাণীর ভেতরে মানুষই একমাত্র সবচেয়ে ঈর্ষাপরায়ণ ও শ্রেষ্ঠ জীব। ঈর্ষাপরায়ণ প্রবনতা এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
এমনও ব্যক্তি আছে যাকে দেখে মনে হয়, সে যেন আপনার জন্য জান-প্রাণ দিয়ে দিচ্ছে বা আপনার মঙ্গল কামনা করে কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে, গভীরে গেলে দেখা যায় যে তা সবই অন্তঃসারশূণ্য বা ফাঁকা। এবং যখন দেখা যায় তার স্বার্থে কোন রকম আঘাত আসে তখনই বুঝা যায় জান-প্রাণ দেওয়া মানুষটির আসল রুপ।
সুতরাং নিজের পথ নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে, কেউ আপনার পথ তৈরি করে দিবে না। নিজের উপর ভরসা রেখে পথচলা উচিত। কেননা অনেক সময় দেখা যায় নিজের ছায়াও বিপদে পাশে থাকেনা। কারণ 'Misfortune doesn't come alone.'
আসলে পৃথিবীটা হল অনেক কিছু শেখার বিচরণ ক্ষেত্র। যারা জন্ম থেকেই কঠিন পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নানা পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন এবং জীবন নামক যুদ্ধক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে এসেছেন, তারাই জীবনে সত্যিকারের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন।
ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের জন্য মানুষ এমন কোন হীন কাজ নেই যা সে করে না। যা কল্পনাকেও হার মানায়। তাই বলতে হয়, মানুষ এমন এক প্রাণী। যার দ্বারা সবই সম্ভব। মানুষ যেমন শ্রেষ্ঠ, আশরাফুল মাখলুকাত ঠিক তেমনি, প্রয়োজনে নরকের নিকৃষ্ট কীটে পরিণত হতেও সময় নেয়না।
স্বপ্ন শব্দটি খুব সুন্দর অর্থবহুল এক শব্দ। আর যে এই সুন্দর শব্দটি প্রয়োগ করতে পারে সে হলো মানুষ। মানুষই পারে স্বপ্ন দেখতে, আর স্বপ্নকে পূরণ করতে! আবার অনেক সময় মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও অনেক বড় কিছু করে ফেলতে পারে, যা কল্পনাতীত।
এ রকম হাজারো উদাহরণ আছে, যা বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। তাই আপনি যে অবস্থানেই থাকুন না কেন, আপনি স্বপ্ন দেখবেন। স্বপ্ন আপনাকে সামনে এগিয়ে নিতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
রাস্তার ছেলেটিও জীবনযুদ্ধে টিকতে পারলে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে।
আর সোনার চামচ মুখে দিয়ে যাদের জন্ম তারাও সেই রাস্তার ছেলের মুখাপেক্ষী হতে হয়, জীবনের কোন না কোন সময়ে। তাই হাল ছেড়ে না দিয়ে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণে নীরবে, নীভৃতে, একাগ্রচিত্তে সাধনা করে যাবেন।
জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কৃতজ্ঞতাবোধ। যার মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, সে নিকৃষ্টজন। জীবনে চলার পথে কারও কাছ থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা পেয়ে থাকলে সারাজীবনে সে সহযোগিতার কথা ভুলে যাওয়া ঠিক নয় কারণ সাহায্যকারী ব্যক্তি আপনার অকৃতজ্ঞতা দেখে হয়তো কিছুই বলবেনা, শুধু অবাক হবেন এবং আপনার প্রতি ঘৃণা ও করুনা থাকবে! তাই সেসব ক্ষেত্রে আপনার এ সাফল্যের কি মূল্য রইলো!
মনে রাখবেন, আপনার চলার পথটি অত্যন্ত কন্টকময় থাকবে। কেউ আপনাকে সুযোগ দিবে না। বরং প্রতি মুহূর্তেই অবহেলার শিকার হবেন। ভেঙ্গে পড়বেন না। আত্মবিশ্বাস হারাবেন না তাতে।
যখন যে পরিস্থিতিতে পরবেন তা মোকাবেলা করবেন। এটাই স্বাভাবিক মনে করে নিঃশব্দে, একাগ্রচিত্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন।
যখন যে পরিস্থিতিতে পরবেন তা মোকাবেলা করবেন। এটাই স্বাভাবিক মনে করে নিঃশব্দে, একাগ্রচিত্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন।
আর একটা অত্যন্ত জরুরি বিষয়, সময় ও সুযোগ সব সময় আসে না। কাকতালীয় ভাবেই হোক বা নিজের যোগ্যতার কারণেই হোক জীবনে যদি কোন সুযোগ আসে, জীবনকে এগিয়ে নেবার সহায়ক হিসেবে সে সুযোগটিকে লুফে নিতে হবে। তবে তা অবশ্যই বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিবেচনা করে।
কারণ জীবন একটাই, লোভের বশবর্তী হয়ে জীবনকে ধ্বংশ করা আর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে সামনের পথে এগিয়ে নেওয়া এক বিষয় নয়। কৃতজ্ঞচিত্তে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জীবনপথে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই কখনো হীনমন্যতায় ভোগবেন না।
তবে, এ কথা অনস্বীকার্য ভুল করেই মানুষ শিখে। যে ভুল করে সেই প্রকৃত শিক্ষা পায় আর সে শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারলেই জীবনে প্রকৃত সার্থকতা আসে।
আরেকটি স্পর্শকাতর বিষয় হচ্ছে অহংকার। অহংকারী ব্যক্তিকে কেউ পছন্দ করেন না। তাই সবাই অহংকারী ব্যক্তি হতে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন। এ সুযোগে সুযোগসন্ধানীরা অহংকারী ব্যক্তিকে খুব সহজেই কুপোকাত করতে পারে। অহংকারী ব্যক্তি তা বুঝে ওঠতে পারেনা। আর এভাবেই অহংকারীর পতন হয়।
নিরহংকারী ও সৎ হোন। সততা আর সত্যবাদিতা দিয়ে জীবনকে জয় করুন। কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে সাফল্যের সিঁড়িতে উঠুন।
এমন কোন কাজ করবেন না। যার দ্বারা আপনাকে মিথ্যে বলতে হয়। নিজের বিবেককে দংশিত হতে হয়। মিথ্যে বলা শূণ্যের কোঠায় আনুন। কারণ একটা মিথ্যা বলবেন তা ঢাকার জন্য আরো দশটা মিথ্যার আশ্রয় নিতে হতে পারে। আর সবসময় মনে রাখবেন, মিথ্যা সকল ধ্বংশের মূল কারণ।
আর রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আপনি রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রাগের মাথায় এমন কিছু করে বসেন যা পরবর্তীতে পস্তানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা।
একটি বিষয় সবসময় মনে রাখবেন , ভুলে হোক বা নিজের অজান্তেই হোক, আপনি যদি কোন ভুল কাজ করে ফেলেন তবে তার প্রায়শ্চিত্ত সারাজীবনই দিয়ে যেতে হয়। একজন আসামিকে যেমন তার কৃতকর্মের জন্য হাজিরা দিয়ে যেতে হয় তেমনি আপনার কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত জীবনভর করে যেতে হবে। তাই পাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আগে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা জানতে বা শিখতে হবে। সেজন্য জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই বুঝেশুনে পা ফেলতে হয়।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো মানসিক শান্তি। যার মধ্যে সন্তুুষ্টি নেই, সে কখনোই শান্তি পায়না।
শান্তি এমন এক বিষয় যার সন্ধান পাওয়া সত্যি দুরুহ। একজন বিচক্ষণ মানুষও বুঝতে পারে না কোথায় তার শান্তি!
অথচ শুধু উপরের দিকে না তাকিয়ে একটু নীচের দিকে তাকালেই পাওয়া যেতে পারে, জীবনের পরম শান্তি!
আপনার চেয়ে ভালো লোকের দিকে না তাকিয়ে আপনার চেয়ে কিছুটা পিছনে যারা আছে তাদের দিকে তাকান।
আপনার সন্তানকে সবচেয়ে ভালো হিসেবে দেখতে চান, খুব ভালো কথা। একটু পিছনের দিকে তাকান। আপনার সন্তানের আশেপাশেও অনেকেই আসতে পারেনি তাদের দিকে তাকান।
আপনি আরো ভাল নিউ ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনতে চান, ভাল কথা। একটু পিছনে ফিরোন , রিক্সাও চড়ার সামর্থ্য নেই, এবার তার দিকে তাকান।
আপনার শহরে একটা বাড়ি নেই সে জন্য খুব খারাপ লাগছে, তাইনা? কিন্তু ভাবুনতো আপনি কত সুখী মানুষ, দিন শেষে মাথা গোঁজার জন্য তো আপনার একটা সুন্দর বিছানা আছে!
কিন্তু যাদের মাথার ওপর ছাদ নেই, রাস্তায় ঘুমিয়ে রাতটা পার হতে হয়। এবার তাদের দিকে তাকান।
আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হতে চান, খুব ভালো কথা। এবার একটু ভাবুন। যার চোখ নেই, যে সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে কেমন তা জানেই না। তার কথা ভাবুন।
এবার চোখ বন্ধ করুন......১-২-৩
দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস নিন। অনুভব করুন। নিশ্চয় অনেক শান্তি অনুভব করছেন, তাইনা?
দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস নিন। অনুভব করুন। নিশ্চয় অনেক শান্তি অনুভব করছেন, তাইনা?
জগতের সকল প্রাণী শান্তিতে ও সুখে বসবাস করুক। সেটাই প্রত্যাশা হোক সকলের।
____________________________
____________________________
No comments