কিভাবে ঘুরে দাড়াবেন
কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন-মোফাজ্জল হোসেন
মোফাজ্জল হোসেন
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
লোক প্রশাসন বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনটা ফুলশয্যা নয়। এই পৃথিবাটা সুখ-দুঃখ, রাত- দিনের অাদলে গড়া। হাসি-কান্নার সংমিশ্রণে গড়া মানুষের অাবেগীয় জীবন। এখানে সফলতা- ব্যর্থতা বিপরীত শব্দ হলেও পালাক্রমে অাসে মানুষের জীবনে। এখানে একটা কথা খুব প্রচলিত- সকাল বেলার ধনীরে তুই, ফকির সন্ধ্যা বেলা।
অামাদের জীবনটা অনেক ছোট। ৬০ কিংবা ৭০ বছরের জীবনে চাওয়া- পাওয়ার অনেক হিসাব-নিকাশ বাকি থেকে যায়। ঈশ্বর কাউকে কখন সফলতা/ ব্যর্থতা দান করবেন, তা শুধু ঈশ্বরই ভাল জানেন। তবুও অামাদের চেষ্টা করে যেতে হবে, ওপরওয়ালার কাছে চাইতে হবে, অফুরন্ত অাছে ঈশ্বরের কাছে; অামাদের শুধু চেয়ে নিতে হবে।
রেস্টুরেন্টের ওয়েটারও দিনের পর দিন অবিশ্রান্ত খাঁটুনি খেটে একদিন রেস্টুরেন্টের মালিক হয়।
গার্মেন্টসের লেবারও দিন-রাত খেঁটে-খুটে একদিন ছোট- খাট শিল্পের মালিক হয়।
বাসের হেল্পার ছেলেটিও একসময় এক- দুইটা বাসের মালিক হয়ে যায়।
গ্রামে বাস করা সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালানো ডিভোর্সী নারীটিও একসময় ছোট কুটির শিল্পের মালিক হয়।
অন্যের মুরগী/গরুর ফার্মে কাজ করা ছেলেটিও একসময় টাকা জমিয়ে জমিয়ে অল্প থেকে শুরু করে একসময় বড় ফার্মের মালিক হয়।
শুধু তিন বেলা খাবার পাবে এই শর্তে গ্যারেজে কাজ করা ছেলেটিও একসময় বড় গ্যারেজ দেয়, ৩/৪ জন লোক রাখে কাজ করার জন্য।
গ্রামের বাজারে পিঠা বিক্রি করা লোকটিও একসময় বাজারের বড় মুদি ব্যবসায়ী হয়।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে পায়খানা পরিষ্কার করা মেথর লোকটিও শুধু সময়ের ব্যবধানে একসময় কয়েক এলাকার মধ্যে বড় সেনিটারি ব্যবসার মালিক হয়।
মাটি কেটে তিন-চার সন্তানকে পড়ালেখা করিয়ে বড় করা মানুষটি শুধু সময়ের ব্যবধানে একসময় এলাকায় ঠিকাদারি করে।
ভিক্ষা করে খাওয়ায়ে, ফিতরার টাকা দিয়ে নাতিনকে পড়ায়ে বৃদ্ধা দাদি একসময় সরকারি কোয়ার্টারে নাতবৌয়ের সাথে থাকে। কত সুখের সংসার হয় তাদের।
প্রিয় পাঠক, কথাগুলো গল্প মনে হতে পারে; বলতে পারেন এমনভাবে সফল কয়জন হয়?
সত্য হল- ব্যর্থতার গল্প কেউ বলে না। পৃথিবীটা শুধু সফল মানুষদের মনে রাখে; ব্যর্থদের রোমন্থন করে না পৃথিবীর স্বার্থপর ইতিহাস।
টানা দুই বছর দশ ঘন্টা করে পরিশ্রম করুন- সফল না হলেও পথটা ঠিকই দেখতে পাবেন। লেগে থাকতে হয়, স্বপ্ন দেখতে হয়।
অাপনার প্রেয়সী/প্রেমিক যখন অাপনার জীবন থেকে চলে গেল না বলেই; নিজেকে একজন ব্যর্থ মানুষের তালিকায় লিপিবদ্ধ করান। নেশার/কষ্টের সাথে করেন বাস; তাতে লাভ কি? ও তো ভাল অাছে, সুখী হয়েছে, স্বার্থের জন্য মানুষ সব পারে। অাপনি যখন মাঝরাতে ওকে ভেবে ঠোঁট পুড়াচ্ছেন, ফুসফুস জ্বালাচ্ছেন/ বালিশ ভিজাচ্ছেন; সে সময় অাপনার প্রেয়সী/প্রেমিক তার প্রিয়কে/ প্রিয়তমাকে উষ্ণ চুম্বনে ভরিয়ে দিচ্ছে, সুখের সাগড়ে ভাসছে দুজন। অাপনাকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না; সাহস নিয়ে দাঁড়াতে হবে, ভাল কিছু একটা করতে হবে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না- মেনে নিন এই সত্য বচন।
ভাল চাকরীর পিছনে ছুটতে ছুটতে যখন অাপনি ক্লান্ত, হতাশা যখন অাপনার প্রতি মুহুর্তের সঙ্গী; ঠিক তখনি অাপনাকে জীবনের মোড় বদলে ফেলতে হবে। এ দেশেও একজন গ্রাজুয়েটের অভিজ্ঞতা ছাড়াই মিনিমাম দশ হাজার টাকা বেতনের চাকরী অাছে। শুরু করে দিন সেটা; বছর পেরুলেই কিন্তু সেই দশ বিশে পা রাখবে।
জীবন অাপনার, নিজেকে সফলদের কাতারে নিয়ে যেতে অনেক সময় লাগে, পরিশ্রম লাগে। সমাজ বাঁধা হয়, অামাদের চিন্তা- ভাবনা অামাদেরকে সংকোচনী অবস্থা থেকে বেরুতে দেয় না। জীবন একটাই; সময় খুবই কম। সুতরাং বিজয়ী হতে হলে-' পাছে লোকে কিছু বলে' এ কথা ভাবার সময়ও নেই।
সমাজ অনেক কিছুই বলবে, অনেক কিছুই চাইবে অাপনার কাছে অামাদের এই স্বার্থপর সমাজ। শুধু হাত ধরে টেনে তুলবে না, ভাল পরামর্শ দিবে না সমাজের বোদ্ধারা। সবাই শুধু চাইবে অাপনার ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগ করতে।
সমাজ কি ভাবল, কি বলল; মাথায় নেওয়ার সময় যে নেই। অাপনার জীবনকে অাপনাকেই প্রস্ফুটিত করতে হবে-
সেই গ্রামের ডিসের ব্যবসায়ী অালম যদি হিরো অালম হতে পারে, সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারে; তাহলে অাপনার কিসের অভাব? হয়ত বলতে পারেন- হিরো অালমকে এভাবে হাইলাইট করা ঠিক না বা সে কোন দৃষ্টান্ত হতে পারে না। অামি মনে করি- হিরো অালম বাংলাদেশে সফলদের কাতারে সবার শীর্ষে। এর অাগে এই লেভেল থেকে এত ভাল পর্যায়ে অাসার নজির খুব একটা দেখি না।
দুইটা গরু লালন- পালন করেও একটা মানুষ একদিন বিরাট বড় গরুর ফার্মের মালিক হতে পারে। বছরে ইনকাম হতে পারে কয়েক লক্ষ টাকা।
ছোট দরজীর দোকান থেকেও কুটিরশিল্প গড়ে তুলছে অনেকে।
অাপনি অাপনার মত করে জীবন সাজান, স্বপ্ন দেখুন। প্রত্যেকটা মানুষ অালাদা। ক্লাসের লাস্টবেঞ্চে বসা ছেলেরা কিন্তু উদ্যোক্তা হয়, চাকরী দেয়।
শিরোনামহীন ব্যান্ডের জিয়া ভাইয়ের কথাই ধরুন- বুয়েটে পড়ার পড়ও উনি কিন্তু অার্কিটেক্ট হিসেবে পরিচিত না। একজন অসাধারণ লিরিসিস্ট হিসেবেই বিরাট খ্যাতি তার।
কিংবা অাভাসের তুহিন ভাই- গায়ক হিসেবেই তিনি পরিচিত মানুষের কাছে। বুয়েটে পড়া ছেলেটি এখন গানের জগত মাতাচ্ছে।
অার্কের হাসান ভাই- অাঠার বছর বয়স পর্যন্ত নিজের বাসায় গান শুনতে পারতেন না; সেই মানুষটিই তার কন্ঠে গেয়েছে কালজয়ী কিছু গান।
জেমস্ ভাইয়ের কথাই ধরুন- গানের জন্য বাড়ি ছেড়ে যাওয়া মানুষটা উপমহাদেশ কাপাচ্ছে।
ধার করে গিটার বাজানো অাইয়ুব বাচ্চু ভাই ছিলেন বিশ্বনন্দিত গিটারিস্ট ও গায়ক।
প্রত্যেকটা মানুষ অালাদা; অালাদা চিন্তা-ভাবনা, জীবনধারণ পদ্ধতি। অাপনার কি ভাল লাগে, কোনটা অাপনার জন্য উপযুক্ত; সেটা করুন- শুধু শুধু অন্যের সাথে মিলাতে যাবেন না।
দুজনের চোখ ( মা-বাবা) পড়তে শিখুন, ভাই- বোনদের মুখের দিকে তাকান; পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুপ্রেরণা হোক মা- বাবার চাওয়া।
নিজেকে নিজেই মটিভেট করতে হবে, ভাল রাখতে হবে, হাসতে হবে। ছোট্ট এই জীবনে ভাল থাকা এবং ভাল রাখাই হোক প্রত্যেকটা ভাল মনের মানুষের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
ভাল থাকুক ভাল মনের মানুষগুলো।
No comments